বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, আক্রান্ত বেশি পুরুষ, মৃত্যু বেশি নারীর

ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন শতশত মানুষ এডিস মশাবাহিত এই রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও মৃত্যু বেশি হচ্ছে নারীদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২২ হাজার ৪৬৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ১৬৪ জন। আর নারীর সংখ্যা ৮ হাজার ৩০৩ জন। এই সময়ে ১১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে নারী ৬৬ জন, পুরুষ ৪৮ জন।

মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রায় অর্ধেকের (১১ হাজার ২১৩ জন) বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। পাঁচ বছরের নিচে ১ হাজার ৫১৬ শিশু। ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১ হাজার ৬১৫ জন, ১০ থেকে ১৮ বছরের ৩ হাজার ৫৭৬ জন, ৪০ থেকে ৬০ বছরের বয়সীদের ৩ হাজার ৫৪৭ জন, ৬০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৯১৯ জন এবং ৮০ বছরের বেশি ৮১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

আর মৃতদের মধ্যে ৪৭ জনের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া ৫ বছরের নিচে ৫ জন, ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৪০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৭ জন, ৬০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ১৪ জন এবং ২ জনের বয়স ছিল ৮০ বছরের বেশি।

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন করে এক শিশুসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ডেঙ্গুতে চট্টগ্রামে এবছর মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। নতুন করে গতকাল আরো ১০১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত চলতি বছরে মোট ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৬৫ জনের। চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ২০ জনের মধ্যে ৯ শিশু, ১ কিশোর, ৬ পুরুষ এবং ৪ জন নারী রয়েছেন। ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহতায় সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু পরীক্ষার দাবি উঠেছে। চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গতকাল বিভিন্ন হাসপাতালে মোট রোগী ভর্তি ছিলেন ২৩০ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯০ জন। বাড়তি রোগীর কারণে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। কিছুক্ষণ পরপরই রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপতালে। বারান্দায়, মেঝেতে চিকিৎসা চলছে।

সরকারি জেনারেল হাসপাতালে গতকাল রোগী ভর্তি ছিলেন ২০ জন। অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১২০ জন।
গতকাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে ডেঙ্গুতে নতুন করে দুইজনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছে। সোমবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেলে এই দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে একজন আনোয়ারা উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের রুস্তমহাট গ্রামের রাজীব ধরের ১০ মাস বয়সী মেয়ে রাজশ্রী ধর এবং অন্যজন চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা ইউনিয়নের দক্ষিণ জোয়ারা গ্রামের এলিনা হক (৩৫)।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১০১ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ২০ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩১ জন এবং চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঁচ জনসহ মোট ৬৬ জন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরও ৩৫ জন চিকিৎসাধীন আছেন।

চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ১ হাজার ৫৬৫ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু জুলাই মাসের ১৮ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৭ জন। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ৭৭ জন, ফেব্রæয়ারিতে ২২ জন, মার্চে ১২ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মে মাসে ৫৩ জন এবং জুনে ২৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ২৩০ জন এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, নারী-পুরুষ সবাইকেই মশা কামড়াচ্ছে। এমন হতে পারে নারীরা হাসপাতালে যাচ্ছে কম। পুরুষরা বেশি ভর্তি হচ্ছে। এটা নিয়ে যদি একটা জরিপ করা যেত, তাহলে ভালো হত। তবে এখনও পর্যন্ত যেটা দেখা যাচ্ছে, নারীরা বেশি মারা যাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গুতে নারীদের বেশি মৃত্যু হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশের নারীদের চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ কম। আর্থিকভাবেও তারা এত স্বাবলম্বী না। যে কারণে নারীদের চিকিৎসা পাওয়ার বিষয়টা পুরুষের মতো না। এ ছাড়া নারীরা আক্রান্ত হলে গুরুত্ব দিচ্ছে না— এটা বেশি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আর চলাফেরা বেশি করা এবং সতর্কতা অবলম্বন না করায় ডেঙ্গুতে পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.