বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি সাধারণত এমন একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা যা মূলত একটি বিশেষ সময়ের জন্য গঠিত হয়, বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার উদ্দেশ্যে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনকালে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে, যাতে নির্বাচনের প্রক্রিয়া অবাধ ও সুষ্ঠু হয়। এই ধরনের সরকার সাধারণত কোনো দলের সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হয় না এবং তাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দেশের কার্যক্রম চালানো। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধারণাটি বারবার রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। মুহাম্মদ ইউনূস, বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। তিনি বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার ধারণাকে জনপ্রিয় করেছেন এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। যদিও তার মূল কাজ অর্থনীতি ও ক্ষুদ্র ঋণের উপর কেন্দ্রিত, তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু সময়ে নিজের চিন্তাভাবনা ও পরামর্শ প্রদান করেছেন।
মুহাম্মদ ইউনূস সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলে যুক্ত না হলেও তার কিছু মতামত এবং কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের সময়, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনা ঠেকাতে তিনি একটি কার্যকর এবং নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সেই সময়, নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিষয়ে দেশের জনগণের মধ্যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়।
মুহাম্মদ ইউনূস জনগণের এবং দেশের সুশীল সমাজের মধ্যে একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তার বক্তব্য ও চিন্তাভাবনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মতো বিষয়গুলোতে গুরুত্ব পেয়েছে, বিশেষ করে তিনি যখন সুশাসন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামোর পক্ষে কথা বলেছেন। এছাড়াও, তিনি সবসময় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা অপরিহার্য। তবে, এটি সবসময় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা করা হলে, নির্বাচনের সময় বিভিন্ন ধরনের প্রভাব ও চাপ থেকে জনগণ মুক্ত থাকতে পারে। এ ধরনের সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবমুক্ত রেখে, দেশের প্রশাসনিক কাঠামো পরিচালনা করা সম্ভব হয়।
মুহাম্মদ ইউনূস সবসময় একটি নিরপেক্ষ এবং শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে থেকেছেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকর ও স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক পরিবেশ অপরিহার্য। তিনি বিশ্বাস করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হতে পারে সেই ব্যবস্থার একটি অংশ যা দেশের গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করতে পারে।