নিজের গড়া ট্রাইব্যুনালেই বিচার হবে শেখ হাসিনার!

ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেলেও মসনদ হারানোর মাত্র এক মাসেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাথার উপর এখন শতাধিক হত্যা মামলা। এসব মামলার বেশিরভাগেরই প্রধান আসামি তিনি। এরই মধ্যে নতুন করে গঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন টিম। যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য এই ট্রাইবুনাল গঠন করেছিল হাসিনা সরকার। এবার কি তাহলে এই আদালতেই তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে! জুলাই গণহত্যার জন্য দায়ী যেসকল ব্যক্তিবর্গ আছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে উনাদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব।

এই আইনের অধীনে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা এবং যারা আদেশ দিয়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে বিচারের আওতায় আনা হবে। এই অপরাধগুলোর মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে তদন্তকালীন সময়ে তাদের আসামি যারা হবেন তাদের গ্রেপতার করার প্রয়োজন। অনেকেই বাংলাদেশের বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কেউ কেউ গিয়েছেন, অনেকেই যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আমাদের প্রথম চেষ্টা থাকবে যে সম্ভাব্য পারপিট্রাইটারস যারা আছে যারা সম্ভাব্য আসামি আছেন তারা যাতে আদালতের জুরিসডিকশনের এর বাইরে চলে যেতে না পারেন, দেশ ত্যাগ করতে না পারেন, সেটাকে ঠেকানোর জন্য আমাদের একটা সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। কে কত বড় আসামি কে কত বড় পদে ছিলেন আইন সেটা দেখবে না। আইনের চোখে সবাই সমান। যিনি অপরাধ করেছেন অপরাধের গ্রাভিটি হিসেবে আসামির সাথে ডিল করা হবে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী হোক আইজিপি হোক বা যত বড় ক্ষমতাধর মন্ত্রী হোক তারা যখন অপরাধের কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন আসামি হিসেবে দাঁড়াবেন। প্রত্যেকেই সমান আচরণ পাবেন তাদের প্রতি কোন জুলুমও করা হবে না, তাদেরকে কোন ছাড়ও দেয়া হবে না।

ভারতের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত মিত্র শেখ হাসিনা। তাকে নরেন্দ্র মোদি সরকার কি অত সহজেই দেশে ফেরত পাঠিয়ে বিপদের মুখে ঠেলে দেবে! জনমনে এই প্রশ্ন সামনে আসছে বারবার। অবশ্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি চুক্তি রয়েছে অপরাধী হস্তান্তর বিষয়ে ২০১৩ সালে। এই চুক্তি করেছিল হাসিনা সরকার। বাংলাদেশের পক্ষে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও ভারতের পক্ষে দেশটির তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুনীল কুমার সিন্ধে চুক্তিতে সই করেছিলেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন আইন আদালত চাইলে দিল্লির কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে ঢাকা। যদি লিগাল প্রসেস থেকে একটা প্রশ্ন আসে তাহলে আমরা তো ফেরত চাইতেই পারি। যে চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সেই চুক্তির আওতায় কি শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য ভারত নাকি ফাঁকফোকর রয়েছে। ২১ টি ধারা সংবলিত চুক্তির ছয় নম্বর ধারাটি এক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এই ধারা মূলত রাজনৈতিক অপরাধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এখানে একদিকে যেমন রাজনৈতিক নেতাদের সুরক্ষা দিয়েছে অন্যদিকে হত্যা অপহরণ ঘুমের মত ঘটনায় সামান্যতমও ছাড় দেয়া হয়নি এই ধারার এক নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায় ফেরত চাইলে ওই ব্যক্তিকে ফেরত না দিয়ে আবেদন প্রত্যাখ্যান করা যাবে। এই ধারার দুই নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ওই একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যার প্ররোচনা, অপহরণ, গুম, বেয়নি ভাবে আটক, জিম্মি করা, অন্যায়ভাবে কারাদণ্ড দেওয়া কিংবা অস্ত্রবিস্ফোরকের মাধ্যমে মানুষের দেহ ক্ষতবিক্ষত করার মত অভিযোগ থাকলে প্রত্যর্পণের দাবি রাজনৈতিক বিবেচনা বলে চিহ্নিত হবে না। এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা হয়েছে এর অধিকাংশই হত্যা ও অপহরণের ফলে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ যদি তাকে ফেরত চায় তাহলে রাজনৈতিক রং দিয়ে সেগুলো উড়িয়ে দেওয়া কঠিন হবে ভারতের জন্য।

বাংলাদেশের কোন আদালত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে ওই পরোয়ানার ভিত্তিতেই ভারতের কাছে তাকে ফেরত চাইতে পারবে বাংলাদেশ। এই চুক্তির আওতায় ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি সেনাবাহিনীর রিসালদার মুসলিম উদ্দিন ও ক্যাপ্টেন আব্দুল মজিদকে ফেরত দিয়েছিল ভারত। একই চুক্তি অনুযায়ী ২০১৫ সালে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী উলফার নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে তুলে দিয়েছিল বাংলাদেশ।

2 কমেন্ট

  1. বিচার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করার জন্য, ইইউ, আমেরিকার একদল, আফ্রিকার একটা দল বিচার বাংলাদেশের ট্রাইবুনালের সাথে কাজ করার অনুরোধ রইলো। যাহাতে বিচারের রায় নিয়ে কোন সন্দেহ না থাকে।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন