দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি ও সোসাইটি অব চিটাগাং আইটি প্রফেশনালস (এসসিআইটিপি)’র যৌথ আয়োজনে ৩দিনব্যাপী ৫ম চট্টগ্রাম আইটি ফেয়ার—২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ১৭ ফেব্রুয়ারি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি, সোসাইটি অব আইটি প্রফেশনালস’র সভাপতি আবদুল্লাহ ফরিদ ও প্লাটিনাম স্পন্সর এফ—ফাইভ’র রিজিওনাল ম্যানেজার শিপন কুমার বণিক ও সফোজ’র কান্ট্রি ম্যানেজার এ এইচ এম মহসিন বক্তব্য রাখেন। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে চেম্বার পরিচালকবৃন্দ মোঃ অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), অঞ্জন শেখর দাশ, মাহফুজুল হক শাহ, মোহাম্মদ মনির উদ্দিন এবং ওমর মুক্তাদির, মেলার প্লাটিনাম স্পন্সর এফ—ফাইভ, গোল্ড স্পন্সর বেনকিউ, সিলভার স্পন্সর এ্যারোডেক, ভেলোসিটি ও সফোজ, টেকনোলজি পার্টনার লিংথ থ্রি এবং অংশগ্রহণকারী ৪০টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ী নেতৃবর্গ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি বলেন—বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে দেশের ভবিষ্যৎ সিলিকন সিটির আদলে রূপান্তরিত করা হবে। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রামে আইসিটি ইনকিউবেটর ও শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার চালু করা হয়েছে। যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা তথ্য প্রযুক্তি সেবা প্রদানের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে। এছাড়াও চট্টগ্রামে যেসব ফ্রিল্যান্সার রয়েছে তাদের যদি আমরা সুযোগ দিতে পারে তাহলে তারা নিজেরা উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। সেজন্য আমরা চিটাগাং চেম্বারকে শেখ কামাল আইসিটি ইনকিউবেশন সেন্টারে ৫ হাজার বর্গফুটের জায়গা বরাদ্দ প্রদান করবো। যেখানে চেম্বার যাচাই—বাছাইপূর্বক ফ্রিল্যান্সারদের কাজ করার সুযোগ করে দিবে। ফ্রিল্যান্সাররা এখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবাসহ ৬ মাস বিনা ভাড়ায় ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ পাবেন। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখতে স্টার্টআপ বাংলাদেশ কোম্পানী থেকে ৫ লক্ষ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত সহজশর্তে ঋণ দেয়া হবে। এ ধরণের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বিলিয়ন ডলারের আইটি কোম্পানী তৈরী হবে দেশে। তিনি বলেন—মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তি খাতেও বিনিয়োগ করছেন। আগামীতে চট্টগ্রাম নগরীতে ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নলেজ পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। যেখানে একাডেমিয়া ও ইন্ডাষ্ট্রিয়াল কলাবোরেশনের মাধ্যমে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। তিনি আরো বলেন—চট্টগ্রামে ১৫টি উপজেলায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে জয় স্মার্ট সার্ভিস এন্ড এমপ্লয়ীমেন্ট সেন্টার গড়ে তোলা হবে। যেখান থেকে প্রতিবছর ১ লক্ষ শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিয়ে সাবলম্বী হতে পারবে। এছাড়াও সরকারের সকল ডাটা ও তথ্য প্রদানে তৈরি করা হচ্ছে জেনারেটিভ এআই ইঞ্জিন যা আগামী ৬ মাসের মধ্যে পাইলট আকারে বাস্তবায়ন হবে। “উন্নয়ন দৃশ্যমান— বাড়বে এবার কর্মসংস্থান” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই শ্লোগানকে সামনে রেখে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ২০৪১ সালের আগেই ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে যাবে বাংলাদেশ।
চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন—মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন—২০৪১ তথা উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের পথে দেশ এগিয়ে চলছে। অর্থনীতির ব্যাপক উন্নয়ন ছাড়া এই উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা কখনোই সম্ভব নয়। বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপি প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। আশা করছি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে প্রবেশ করবে। সরকারের ডিজিটাইজেশনের ফলে এখন জনগণ ঘরে বসে সুফল পেতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ভূমির মত জটিল সরকারি সেবাকে ডিজিটাইজেশন করার মাধ্যমে সরকার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যার সুফল ব্যবসায়ীসহ আপামর জনতা ভোগ করবে। এছাড়াও যেসব সমস্যা এখনো বিদ্যমান রয়েছে তা সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাত। তিনি বলেন—তথ্য প্রযুক্তি খাতে ভারত, কোরিয়া অনেক এগিয়ে রয়েছে। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের ১৮০ মিলিয়ন জনশক্তির এই দেশকে তথ্য প্রযুক্তি খাতেও সমৃদ্ধ করতে হবে। এজন্য সরকারের সহায়তা ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তথ্য প্রযুক্তির বিকাশে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে চিটাগাং চেম্বার। এরই ধারবাহিকতায় ৫ম বারের মত চট্টগ্রাম আইটি ফেয়ারের আয়োজন করছে চেম্বার।
এসসিআইটিপি’র সভাপতি আবদুল্লাহ ফরিদ বলেন—এসসিআইটিপি চট্টগ্রামে সকল আইটি প্রফেশনালদেরকে নিয়ে গঠিত একটি সংগঠন। যার মাধ্যমে আইটি প্রফেশনালদের পেশাগত মানোন্নয়নে প্রতিনিয়তঃ বিভিন্ন কাজ ও কর্মসূচী পালন করে আসছে। ‘নেক্সট টেক হাব দি চট্টগ্রাম’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজন করছে ৫ম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা—২০২৪। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ভারত, যুক্তরাস্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও আয়ারল্যান্ডের মালিকানাধীন আইটি ও সল্যুশন বেইজড প্রতিষ্ঠান এবারের আইটি ফেয়ারে অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া মেলা চলাকালীন সাইবার সিকিউরিটি ডিজিটাল মার্কেটিং—সহ তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক ৫টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। যার মাধ্যমে চট্টগ্রামের আইটি প্রফেশনাল এবং ফ্রিল্যান্সারা উপকৃত হবে।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর মেলায় বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি । উল্লেখ্য, মেলায় ৪০টির মত প্রতিষ্ঠান প্রায় ৬০টি স্টল নিয়ে অংশগ্রহণ করছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ভারত, যুক্তরাস্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও আয়ারল্যান্ডের মালিকানাধীন আইটি ও সল্যুশন বেইজড প্রতিষ্ঠান এবারের আইটি ফেয়ারে অংশগ্রহণ করছে। মেলায় প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে থাকছে এফ—ফাইভ। গোল্ড স্পন্সর হিসেবে থাকছে ডিডিএন এবং সিলভার স্পন্সর হিসেবে থাকছে সফোস। টেকনোলজি পার্টনার হিসেবে থাকছে লিংথ থ্রি এবং সাইবার সিকিউরিটি পার্টনার হিসেবে অংশগ্রহণ করছে বিটলস সাইবার সিকিউরিটি লিঃ। এছাড়া মেলা চলাকালীন প্রতিদিন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিভিন্ন সেমিনার আয়োজন রয়েছে। ১৭—১৯ ফেব্রুয়ারি মেলা প্রতিদিন সকাল ১০.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা পর্যন্ত চলবে।