সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইসরাইলি বিমান হামলা, এক জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপকসহ অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ৯ জন। সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা সানা এবং বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) এ হামলা চালানো হয়। নিহতদের মধ্যে টিভি উপস্থাপক সাফা আহমেদও ছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দখলকৃত গোলান মালভূমি থেকে ড্রোন ও বিমান হামলা চালিয়ে দামেস্কে আঘাত হানে। সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, এই হামলা স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে শুরু হয়। হামলায় তিনজন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারান এবং আহত হন ৯ জন। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশিরভাগ ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, পশ্চিম সিরিয়ার টেলিকম ভবনের পাশে বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং এর পরপরই একটি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। যদিও ওই ভিডিওতে সাফা আহমেদসহ অন্য নিহতদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি।
ইসরাইলের হামলা সিরিয়ায় নতুন কিছু নয়, বিশেষ করে গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরাইল সিরিয়ায় মাঝেমধ্যে বিমান-হামলা চালিয়ে আসছে। তবে ইসরাইল সাধারণত এসব হামলার বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করে না। সিরিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলি আগ্রাসনের শিকার হয়ে আসছে এবং এই হামলার ফলে দেশটির বেসামরিক জনগণ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
সিরিয়ার পাশাপাশি লেবাননে সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরাইল। মঙ্গলবার ভোরে ইসরাইলি সেনাবাহিনী দক্ষিণ লেবাননের সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামে “নির্দিষ্ট এবং সীমিত” স্থল অভিযান শুরু করে। ইসরাইলি বাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী, এই অভিযানটি মূলত হিজবুল্লাহর অবকাঠামো লক্ষ্য করে পরিচালিত হচ্ছে। ইসরাইলের নতুন এই স্থল অভিযানকে “অপারেশন নর্দান অ্যারোস” নামে অভিহিত করা হয়েছে। এই অভিযানে স্থল, আকাশ, এবং কামান বাহিনী একত্রিতভাবে অংশ নিচ্ছে।
আলজাজিরার রিপোর্ট অনুসারে, ইসরাইল লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে বিমান-হামলা শুরু করেছে। বিমান হামলার আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। হামলার ফলে দক্ষিণ লেবাননের গ্রামগুলোতে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে, এবং এ অঞ্চলে সংঘর্ষের মাত্রা আরও বেড়ে চলেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল ও অস্থিতিশীল। ইসরাইলের হামলা ও সামরিক অভিযানগুলো সিরিয়া ও লেবাননের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে ফেলছে। এ ধরনের আক্রমণ শুধু দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকেই বিপর্যস্ত করছে না, বরং পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। ইসরাইল-লেবানন ও ইসরাইল-সিরিয়া সংঘাতের প্রতিটি নতুন ধাপে স্থানীয় জনগণ ভুক্তভোগী হচ্ছে, এবং আন্তর্জাতিক মহল এই সংকট নিরসনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।