বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বর এ আক্রান্ত হয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা পরিস্থিতির আরও অবনতি নির্দেশ করছে। একই সময়ের মধ্যে নতুন করে ৮৬০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আসার বদলে দিন দিন আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, যা জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে জানা যায়, ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্ত হয়ে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বর্তমানে হাজার হাজার রোগী ভর্তি আছেন। ঢাকার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য জেলাতেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। বিশেষত বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, কারণ এডিস মশার বংশবিস্তার এই সময়ে সবচেয়ে বেশি হয়। তবে এবার বর্ষাকালের অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে মশা নিয়ন্ত্রণ করা আরো কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা সংকট ও জনস্বাস্থ্যের ওপর চাপ
ডেঙ্গু পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান অবনতিতে দেশের হাসপাতালগুলোতেও চরম চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার প্রধান হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা সংখ্যা প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোর আইসিইউ ও ওয়ার্ডগুলোতে রোগী সেবায় সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক স্থানে পর্যাপ্ত শয্যা ও প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাবে রোগীরা বাধ্য হয়ে মেঝেতে বসে বা বাইরে অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অন্যদিকে, চিকিৎসক ও নার্সদেরও কর্মভার বাড়ছে। দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা এবং অনেক রোগীকে একসঙ্গে সেবা দেওয়ার কারণে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় এই বিশাল চাপ সামাল দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ এবং সেবা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবতা বলছে, সংকট এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে।
সরকারের উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জ
সরকার ডেঙ্গু মোকাবিলায় বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মশক নিধন কার্যক্রম, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, এবং দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা সেবা। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো মশার বংশবিস্তার রোধে ফগিং কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করতে বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন করছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের প্রচেষ্টা যথেষ্ট হলেও তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হলে পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হবে না। এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে এবং তাদের নিজ নিজ এলাকায় জমে থাকা পানি ও অপরিষ্কার স্থানগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধের মূল কৌশল হলো মশা নিয়ন্ত্রণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি। এছাড়া, ডেঙ্গুর উপসর্গ যেমন জ্বর, মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা বা র্যাশ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সঠিক চিকিৎসা না নিলে ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক রূপ নিতে পারে, যা রোগীর জন্য জীবনহানির কারণ হতে পারে।