বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ সম্মেলন সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন। এ সফরে তিনি বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১২টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রধানরাও ছিলেন। এসব বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরার পাশাপাশি সহযোগিতার আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক সম্প্রতি কিছুটা সংকটে থাকলেও, এই সফর সেই সঙ্কট কাটাতে সহায়ক হয়েছে। বিশেষ করে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ক ইস্যুতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পুনঃস্থাপনে সহায়ক হয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন। এ সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে বলে বিশ্লেষক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক ইউনূসের সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত তা সময়সূচির কারণে সম্ভব হয়নি। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে এ ধরনের বৈঠক সম্পর্কের উন্নতিতে সহায়ক হতে পারত।
এছাড়াও, সফরের সময় অর্থনৈতিক সংস্কার এবং বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আশ্বাসও পাওয়া গেছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য ৩.৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অধ্যাপক ইউনূসের সরকারকে এই অর্থ বরাদ্দ মূলত অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমের জন্য দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এই সংস্কারকে গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত করতে চায়, যাতে সাধারণ মানুষ এর সুফল পায়।
পাশাপাশি, জাতিসংঘ সম্মেলন সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বৈঠক হয়। এই বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গেও হয়, যেখানে চীন নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি এই বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হয়।
অবশেষে, জাতিসংঘ সম্মেলন সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বব্যাপী পাচার হওয়া অর্থের প্রবাহ বন্ধ করার বিষয়ে জোর দেন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কামনা করেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।