নাচ-গান-আবৃত্তি ও কথামালা পরিবেশনার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে বর্ষাকে বরণ করে নিয়েছে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘খেলাঘর’। আজ আষাঢ়ের প্রথমদিন শনিবার (১৫ জুন) সন্ধ্যায় নগরীর এনায়েতবাজার মহিলা কলেজ মিলনায়তনে ‘বর্ষাবরণ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর। শিশু-কিশোরদের নাচ-গান-আবৃত্তি পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উৎসব মুখর হয়ে ওঠে আয়োজনটি। বর্ষা যেমন গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহ দূর করে প্রকৃতিকে করে তোলে স্নিগ্ধ-শীতল, তেমনি ‘বর্ষাবরণ’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মন থেকে সংকীর্ণতা দূর করে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে তুলবে সম্প্রীতির বাংলাদেশ- এমনটাই আশা করেন আয়োজকরা।
অনুষ্ঠানে বর্ষা বন্দনা করে আলোচনা করেন কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক অধ্যাপক মুজিব রাহমান। খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি নাট্যজন মুনির হেলালের সভাপতিত্বে কথামালায় অংশ নেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রকৌশলী রথীন সেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল কবির, কেন্দ্রীয় সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য, অধ্যাপক রোজী সেন, চন্দন পাল, জাতীয় পরিষদ সদস্য দেবাশীষ রায়, মহানগর কমিটির উপদেষ্ঠা কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর, সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ বসু। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মহানগর কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য পার্থ প্রতীম নাহা ও জয়ন্ত রাহা। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন শুচিস্মিতা চৌধুরী, দেবমিতা নন্দী প্রজ্ঞা। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন তরুণ চক্রবর্তী। বক্তারা বলেন, সুস্থ ধারার সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা ও সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে খেলাঘর শিশু-কিশোরদের অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানমনস্ক ও মানবিকবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করে। খেলাঘর দেশ ও দেশের মানুষকে, দেশের ঐতিহ্যকে ভালবাসতে শেখায়। খেলাঘরের একটি অন্যতম কর্মসূচি হলো পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে শিশু-কিশোরদের পরিচয় করানো। এরই ধারাবাহিকতায় খেলাঘর’র আয়োজনে এই ‘বর্ষাবরণ’ অনুষ্ঠান।
আলোচকরা বলেন, ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ এই বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর গতিধারায় প্রকৃতি নিজেকে রাঙিয়ে তোলে বিচিত্ররূপে। গ্রীষ্মের রিক্ততাকে ঐশ্বর্যের পূর্ণতায় ভরে দিতে সাড়ম্বরে-গুরুগম্ভীর রূপে প্রকৃতিতে বর্ষার আবির্ভাব ঘটে। প্রাণহীন প্রকৃতিতে জাগে অপূর্ব প্রাণ-স্পন্দন। বাংলার প্রকৃতি ফিরে পায় তার চিরচেনা সবুজ-শ্যামল সাজ। অবিরাম বৃষ্টি ধারায় প্রকৃতির সর্বত্র লাগে শিহরন, জাগে সজীবতা। অপূর্ব মেঘের সমারোহে শ্যামল, সুন্দর, নয়নাভিরাম বর্ষা বাংলার প্রকৃতিতে নিয়ে আসে শ্যামছায়াঘন দিন। বৃষ্টির ছোঁয়ার কদম, কেয়া, হাসনাহেনার মাতাল গন্ধে প্রকৃতি-হৃদয়ের দ্বার হয় উন্মুক্ত। তারা বলেন, পৃথিবী ক্রমশ উষ্ণ হচ্ছে। সবুজের সমারোহ দিনে দিনে কমছে। বর্ষা আমাদের প্রকৃতিতে প্রাণের সঞ্চার ঘটায়। বর্ষাকালেই নতুন নতুন চারা গাছ হয়। বর্ষার বৃষ্টির পানি বড় গাছ হয়ে ওঠে আর গাছ আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। আমাদের পৃথিবী যাতে মরুভূমি হয়ে না যায়, এই বর্ষা যাতে নিয়মিত আসে সেজন্য শিশু-কিশোদেরই এগিয়ে আসতে হবে। সবুজকে ভালোবাসতে হবে। বেশি করে চারা গাছ লাগাতে হবে। পাহাড় ধ্বংস করবো না। প্রকৃতিকে ভালোবাসবো।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বর্ষা মানব মনের আবেগকে নাড়া দেয়। বর্ষার রিমঝিম ছন্দ তালে মনের মধ্যে ভাবের সঞ্চার হয়, মনের অজান্তে গীত হয় কবিতা বা গানের চরণ। বর্ষা প্রকৃতির মর্মরসের চিত্রও কবিরা এঁকেছেন তার কবিতা ও গানে। তাই বর্ষাকেই স্মরণ করে আয়োজন হয় বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠানের। গ্রীষ্মের তাপদাহে সবাই চায় একটু শীতল পরশ। তাই এভাবেই বর্ষার জলে সিক্ত হওয়ার কামনায় নাচে গানে আয়োজন করা হয় বর্ষামঙ্গলের। জীবন ও পরিবেশের সাথে মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, অতুল প্রসাদ লিখেছেন ঋতু বৈচিত্র্যের গান। কিন্তু তার মধ্যে বর্ষার গানই বেশি। বর্ষার স্নিগ্ধ প্রকৃতির মাঝের মানুষও ফিরে পাবে নতুন জীবনিশক্তি।