ভারতের সেভেন সিস্টারস এর অন্তর্ভুক্ত মণিপুর রাজ্য পরিণত হয়েছে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে। গত বছর মে মাসে মেইতেই এবং কুকি গোষ্ঠীর মধ্যে আরম্ভ হওয়া সহিংস সংঘাত মাঝে কিছু মাস বন্ধ থাকলেও ফের নতুন করে জোরালোভাবে শুরু হয়েছে। নতুন করে সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যে রাজ্যটির তিনটি জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিসেবা। চলমান সহিংসতার মুখে সিদ্ধান্ত নিতে রীতিমত বাধ্য হয়েছে রাজ্য সরকার। তবে কারফিউ উপেক্ষা করেই চলছে প্রবলমাত্রার বিক্ষোপ। ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইমফল, পশ্চিম ইমফল, পূর্ব এবং থৌবল জেলায় গতকাল ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১১:০০ টা থেকে সর্বাত্মক কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যের শান্তি পুনরুদ্ধারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোবের একদিন পরেই মণিপুরের এই তিন জেলায় অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হল। একই সঙ্গে উদ্ভূত উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে মণিপুরে ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর তিনটা থেকে আগামী পাঁচ দিনের জন্য অর্থাৎ ১৫ই সেপ্টেম্বর দুপুর তিনটা পর্যন্ত সমগ্র রাজ্যে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এক নির্দেশিকা জারি করে একথা জানিয়েছে।
মণিপুর সরকার আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে রাজ্যে অসামাজিক উপাদান ছবি ঘৃণাত্মক বক্তব্য এবং ঘৃণামূলক ভিডিও সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে যা জনগণের আবেগকে উসকে দিচ্ছে এমনটা বলে নির্দেশিকায় জানিয়েছে রাজ্য সরকার এদিকে মণিপুর সরকারের। ডিজিপি এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবিতে কারফিউ উপেক্ষা করে গতকাল নারী ও শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনকারীরা ইমফলের রাজভবনের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এসময় আন্দোলনকারীদের ছত্র ভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত সোমবার খোয়াইরাম বন্দ ওমেন মার্কেটে অবস্থানরত কয়েকশত শিক্ষার্থী বিটি রোড ধরে রাজভবনের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কংগ্রেস ভবনের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর বাঁধার মুখে পিছু হাটে তারা। স্থানীয় সময় রবিবার রাতেও বিপুল সংখ্যক নারী ইমফলের রাস্তায় নামেন রাজ্যে শান্তি ফেরানোর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং এর পদত্যাগের দাবি তুলেছেন। তারা উল্লেখ যে গত বছরের মে থেকে মণিপুরের মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতিগত দাঙ্গায় ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং হাজারো মানুষ গৃহীন হয়ে পড়েছে। এরপর চলতি সেপ্টেম্বর মাসে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয় মণিপুরে । গত কয়েকদিনে বিদ্রোহীদের সাথে দফায় দফায় গুলি বিনিময় হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বোমা বিস্ফোরণের পাশাপাশি ড্রোন ও রকেট দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে একাধিক অঞ্চলে।