পৃথিবীর এক অদ্ভুত জগতে প্রতিদিন চলে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। এ যুদ্ধে নেই কোন সেনাবাহিনী বন্দুক বা আধুনিক অস্ত্র। যুদ্ধের ময়দান ছোট্ট আর যোদ্ধারা আরো ক্ষুদ্র। তারা পিঁপড়া, পিঁপড়াদের এই রহস্যময় দুনিয়ায় রোজই চলে ভয়ঙ্কর লড়াই আর এই লড়াইয়ের কারণ দাস বানানোর জন্য সংগ্রাম। অবাক হচ্ছেন? বাস্তবেই পিঁপড়াদের রাজত্বে প্রতিদিন দাস বানানোর এক অদ্ভুত সংগ্রাম চলতেই থাকে। বিশ্বের প্রায় ৫০ টি প্রজাতির পিঁপড়ার মধ্যে এই দাসপ্রথা বিদ্যমান যা এক চরম শ্রম বিভাজনের উদাহরণ। এর কেন্দ্রে রয়েছে পলিয়ার গ্রাস প্রজাতির পিঁপড়া যাদের কলোনির ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই দাস।
পিঁপড়া পুরো কলোনিটি নিয়ন্ত্রণ করে। কয়েকশো পলিয়ার গ্রাস পিঁপড়া এবং একমাত্র রানী এই দাস পিঁপড়াদের ছাড়া পলিয়ার গ্রাস পিঁপড়ারা টিকে থাকতেই পারে না। পলিয়ার গ্রাস পিঁপড়ারা দাস বানানোর জন্য বিশেষ কৌশল ব্যবহার করে। তারা এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এই দাসত্বের ব্যবস্থায় যে নিজেদের খেয়াল রাখাটাও ভুলে যায়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বাসা বানানো এমনকি নিজেদের বাচ্চাদের যত্ন নেওয়ার মতো কাজও তারা করেন না। তাদের একমাত্র কাজ অভিযানে অংশ নেওয়া।
ফরমাইকা পিঁপড়াদের এক বিশাল কলোনি যেখানে প্রায় ১০,০০০ পিঁপড়ার বসবাস। প্রথমে আসে তাদের অনুসন্ধানী একটি পিঁপড়া যা শত্রুর অবস্থান খুঁজে বের করে এরপর হাজার হাজার পলিয়ার গ্রাস পিঁপড়া আক্রমণে যোগ দেয়। ফরমাইকা পিঁপড়ারা বিশেষ এক ধরনের রাসায়নিক ছুড়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে কিন্তু পলিয়ার গ্রাস পিঁপড়ারা তাদের নিজেদের রাসায়নিক দিয়ে ফরমাইকাদের বিভ্রান্ত করে ফেলে। তবে পলিয়ার গ্রাস ছাড়াও কিছু পিঁপড়ার প্রজাতি শক্তির চেয়ে কৌশল ব্যবহার করে দাস বানায়। নতুন গবেষণায় জানা গেছে পিলেস পিঁপড়া নামে একটি প্রজাতি দাস বানানোর জন্য শত্রুর মধ্যে চুপিসারে ঢুকে পড়ে। মাত্র চারটি পিঁপড়া শত্রুর কলোনিতে ঢুকে ডিম লার্ভা এমনকি বাচ্চা পিঁপড়াদের চুরি করে তারা রাসায়নিক গন্ধ পরিবর্তন করে শত্রুদের চোখ এড়িয়ে যায় আর তাদের শত্রুরা বুঝতেও পারে না যে তাদের শিশুরা চুরি হচ্ছে । এমনকি শত্রু পিঁপড়া বুঝলেও প্লেস পিঁপড়াদের সাথে যুদ্ধ করে জেতার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। তারা সুনিপন কৌশলে শত্রুদের আক্রমণ করে পঙ্গু করে ফেলে এবং শেষে হত্যা করে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দাস পিঁপড়াদের বিদ্রোহের প্রমাণও পেয়েছেন। তারা লক্ষ্য করেছেন যে দাস পিঁপড়া নিজেদের প্রজাতির নতুন জন্মানো লার্ভা গুলোকে হত্যা করছে যাতে দাসত্ব প্রথা বন্ধ হয়।
এই বিদ্রোহের ফলে দাস মালিক পিঁপড়াদের ভবিষ্যতে নতুন দাস পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এই দাস পিঁপড়াদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল যা তাদের প্রজাতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে উপকারী হতে পারে। পিঁপড়াদের এই দাসত্ব প্রথা শুধু একটি চমকপ্রদ জীববৈজ্ঞানিক অধ্যায় নয় বরং এটি আমাদের শেখায় সামাজিক পরজীবী এবং সহাবস্থানের জটিলতা গুলি প্রতিদিন এই ক্ষুদ্র পিঁপড়া গুলি নতুন ইতিহাস তৈরি করছে। পিঁপড়াদের এই রহস্যময় জগতে এখনো অনেক রহস্য উন্মোচিত হয়নি এবং বিজ্ঞানীদের কাছে এ এক অনন্ত বিষয়।