পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে নগরীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওয়াসা মোড়ে চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর ক্যাম্প ভাংচুর ও নেতাকর্মীদের মারধরার করেন পদযাত্রায় অংশ নেওয়া বিএনপির কর্মীরা। এ ঘটনার জের ধরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা নগরীর নাসিমন ভবনস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর এবং কার্যালয়ের বাইরে টাঙানো ব্যানার-ফেস্টুনে আগুন ধরিয়ে দেন। গতকাল বুধবার বিকালে দিকে এই ঘটনা ঘটে।
প্রতক্ষদর্শীদের মতে, বুধবার বিকেলে নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রাটি লালখান বাজার হয়ে দেওয়ানহাট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পদযাত্রা শেষে ফেরার সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে লালখান বাজার এলাকায় নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর নির্বাচনী কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এসময় ফ্লাইওভারের উপর থেকেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এসময় রাস্তায় থাকা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার নিয়োজিত অন্তত ৮টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লালখান বাজার এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। এরপর তারা মিছিল নিয়ে এক কিলোমিটার দূরে নাসিমন ভবনে গিয়ে বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে কার্যালয়ের ভেতরে চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া ফটকেও ভাঙচুর করা হয়। ব্যানার-ফেস্টুনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এসময় বিএনপি কার্যালয়ে কেউ ছিলেন না। ঘটনার পর পর সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়। পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেন। পরে পুলিশ কার্যালয়টি ঘিরে রাখে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহব্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা কোথাও কোনো ধরনের ভাঙচুর করিনি। আমাদের কর্মসূচি শেষ হয়েছে দেওয়ান হাট মোড়ে। আমাদের কর্মীরা ওয়াসার মোড় দিয়ে ফিরে যাবে কেন? এটা একটা সাজানো নাটক।
তিনি বলেন, পদযাত্রা শেষ করে যখন নেতাকর্মীরা স্লোগান দিয়ে বাসায় ফিরছিলো তখন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয় থেকেই আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। এমন কি, ফেরার পথে গাড়ি থেকে নামিয়ে পেটানো হয় অনেককে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। তারমধ্যে বায়েজিদের যুবদল নেতা ইসমাঈলের অবস্থা গুরুতর। সবচেয়ে বড় কথা- একটা পার্টির অফিসে কীভাবে হামলা হয়? এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। তারা পার্টি অফিসে সবকিছু তছনছ করেছে। নথিপত্র ও কম্পিউটার নিয়ে গেছে।
একই বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রচার সেলের সমন্বয়ক ও নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক বলেন, আমরা উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে প্রার্থীকে নিয়ে প্রচারণায় ছিলাম। সেখানে খবর পাই, বিএনপির পদযাত্রা শেষে লালখান বাজারে আমাদের যে মূল নির্বাচনী কার্যালয় আছে, সেখানে হামলা হয়েছে। কার্যালয়ে সেসময় নেতাদের মধ্যে কেউ ছিলেন না। কয়েকজন কর্মী ছিলেন। এ সুযোগে বিএনপির নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা করে।
এদিকে নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার খবর পেয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা দ্রুত ওয়াসা মোড়ে অবস্থান নেন। হামলার প্রতিবাদে লালখান বাজার মোড় থেকে ওয়াসার মোড় পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা স্লোগান দিয়ে হামলাকারীদের বিচার দাবি করেন। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নগরীর নুর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবনস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের দিকে এগোতে থাকে। নৌকার প্রার্থীর কার্যালয়ে হামলার জবাবে বিএনপি অফিস ভাংচুর করে তারা।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের পর কিছু বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মী জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে নাসিমন ভবনে গিয়ে বিএনপি কার্যালয়ের ফটকে ভাঙচুর করে। এসময় পুলিশ উপস্থিত হয়ে সেখান থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেয়। তারা কার্যালয়ের ভিতরে ভাঙচুর করতে পারেনি পুলিশের জন্য। কার্যালয়ের ফটকে থাকা ব্যানার ফেস্টুন ছিড়ে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ কার্যালয়টি ঘিরে রেখে উক্ত স্থানের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
অন্যদিকে ভাঙচুরের ঘটনার পর রাতে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে যান নগর বিএনপির আহব্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। এসময় সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহব্বায়ক আব্দুল মান্নান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ছিলেন। তারা ভাঙচুরকৃত বিএনপি অফিস পরিদর্শন করেন এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। এসময় ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রামের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাজনৈতিক দলের অফিসে ঢুকে তান্ডবলীলা চালানো হয়েছে। সহিংস রাজনীতিতে বিএনপি বিশ্বাস করে না। তারা নিজেরা হামলা করে বিএনপির উপর দোষ চাপিয়ে চট্টগ্রামে বিরাজমান শান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করছে । আজকের (বুধবার) এই হামলার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী দল।