Site icon দৈনিক পূর্বদেশ | বাংলা নিউজ পেপার

যৌতুকের এপিট ওপিট

আমরা সাধারণত জেনে আসতেছি, যৌতুক ছেলেরাই নেয়! আজ আমি যৌতুকের একটি ভিন্ন প্রচলনের কথাও আপনাদের শোনাব। বর্তমান সমাজে ছেলেরা মেয়েদের পরিবার থেকে কিছু দাবী করলে তাকে যৌতুক হিসাবে ধরা হয়, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে যা একটি মারাত্মক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

কিন্তু আমরা এর আডালে কিছু বিয়ে ব্যবসায়ী! পরিবার তাদের সুন্দরী মেয়েকে পন্য হিসাবে তৈরী করছে। তারা ২০ থেকে ৫০ বরি স্বর্ণ ও ২০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা কাবিনের হিস্যা বুঝে নিয়ে তারপর মেয়ে বিক্রি করছে!
তাদের উদ্দেশ্যও খারাপ তারাতাড়ি ডিভোর্স হলেই তাদের ব্যবসায় মুলধন ছাড়া লাভ কোটি টাকা!

ডাঃ আসিকের কথা হয়ত আপনারা ভুলে গিয়েছেন, মিথু নামক এক ব্যবসায়ী নারীকে বড় অংকোর কাবীন দিয়ে বিয়ে করার পর। আসিক জেনে যায় যে মিথু একজন বহুগামী নারী!
মিঃ আসিক নিরবে নিবৃত্তে, ধুকে ধুকে নিজেকে শেষ করেছেন! সর্বশেষ আত্মহত্যা করেছিলেন ডিভোর্স দিলে এত টাকা কেমন করে দিবে সেই ভয়ে!

আপনারা কখনও কি ভেবে দেখেছেন?
আমাদের এই সমাজে মিঃ আসিকের মত কত লক্ষ লক্ষ জীবন্ত লাশ আসিক এখনও ধুকে ধুকে নিজেকে ধ্বংস করে দিচ্ছে!
একবার চিন্তা করে দেখেন তো। আপনার বিবাহিত স্ত্রী আপনার সামনে অন্যের সাতে ডেটিং করতে যায়, অন্য পুরুষদের সাতে বেডে যায়, বাপের বাড়ি, ডাক্তারের কথা বলে পরকিয়ায় লিপ্ত হয়!

আপনি এসব কিছু জেনেও, কিছুই করতে পারছেন না!
কারন ডিভোর্স দিলে ২০/৫০ ভরি স্বর্ণ ও ২০/৫০ লক্ষ কাবিনের টাকা দেওয়ার মত সামর্থ আপনার নেই!
আপনি তো বিয়ে করেছিলেন, ভালোবেসে আর চিন্তা করেছিলেন, বউ তো আপনার ঘরেই আসবে! সুতরাং চিন্তার কী?
গভীর ভালোবাসা ও ভালোলাগা থেকে আপনি এত বেশী দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করেছিলেন।
কিন্তু এইটা নিয়ে যে ব্যবসা করা হবে সেই চিন্তা তো আর আপনার মাথায় ছিল না!
শেষে আপনিও একজন মিঃ আসিক হয়ে গেলেন!

ইসলামের বিয়ে হওয়ার কথা ছেলে ও মেয়ের উভয়ের সম্মতিতে উভয়ের সাধ্যের মধ্যে যতটুকু দেনমোহর দেওয়ার কথা। টিক ততটুকু দিয়ে বিয়েকে সহজ করে দেওয়া। কিন্তু আমাদের সমাজে ঠিক ভিন্নতার প্রচলন।
অনেক মা-বাবা আছেন ঘরে ২/৩/৪ টা উপযুক্ত মেয়ে আছে। বর যাত্রী সহ কমপক্ষে মেয়ের বাবাকে ১০ লক্ষ টাকা বাজেট নিয়ে বিয়ের জন্য নামতে হবে বিধায়, সাধ্য না থাকার দরুন বিয়ে উপযুক্ত মেয়েদের আর্তনাধ দেখেও মা-বাবা নিরবে সহ্য করেন!
নিজেদেরকে এক পরাজিত মা-বাবা হিসাবে ধুকে ধুকে মরেন!

এদিকে সমাজে শিক্ষিত ও বেকার কিংবা স্বল্প বেতনের চাকরী করা ছেলেটাও ভয় পায় বিয়ে করতে!
কারন তার ১০/২০ কিংবা স্তর বুঝে ৫০ ভরি স্বর্ণ আর মেয়ের জন্য ২/৫ লক্ষ টাকার কাপড় আর সাতে ২০/৫০ লক্ষ টাকার কাবীননামা দেওয়া আর সামাজিক আনুসাংগিক খাওয়ানো সহ নগদ ২০/৩০ কিংবা ৫০ লক্ষ টাকার বাজেট করে বিয়ে করার ভয়ে। ছেলেটা আর বিয়ের জন্য তেমন আগ্রহ দেখায় না!

আপনি সচেতন নাগরিক হিসাবে সোস্যাল মিডিয়ায় গলা ফাটান, অন্যের ছেলে মেয়ের বিয়েতে যৌতুকের লেনাদেনা দেখলে আপনার চেতনার দন্ড খাড়ায়। কিন্তু নিজের মেয়েকে অন্য একজন শিক্ষত বেকার বা স্বল্প বেতনের চাকরী করা ছেলেকে বিয়ে দিতে আপনার অনিহা দেখে তো মনে হয়, আপনিও মিথুর বাবা -মায়ের মত একজন মেয়ের দেহ ব্যবসায়ী!
আপনার মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার আগে কখনও কি পাত্রকে ডেকে জিগ্যেস করেছেন বাবা তোমার কাছে আমি শুধু আমার মেয়ের একটি সুন্দর ও সুখী জীবন আর সুন্দর সংসার চাই। তোমার সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব ততটুকুতেই আমি আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিব!
এই কথা বলার মত আপনার সাহস কি আছে?
জনাব যৌতুক বিরোধী সেলেব্রিটি গার্ডিয়ান?

ঠিক তেমনি ভাবে, একজন প্রতিষ্টিত ও ভাল ব্যবসায়ী কিংবা ভাল চাকুরীজীবি ছেলের মা-বাবারাও কি কখন বলতে পারবেন! আপনি আপনার ছেলের জন্য একজন সামাজিক ও ভদ্রলোকের মেয়েকে আপনার অতি প্রতিষ্টিত ছেলের জন্য কোন দাবী ছাড়া ঘরের বউ করে নিবেন? নাকি আপনিও সময় মত ঝুপ বুঝে কুপিয়ে সব আদায় করে ছাড়বেন জনাব সেলেব্রিটি গার্ডিয়ান?
আমরা আমাদের সামজকে আজ এক প্রকার লোভের ও ধান্দার ক্ষেত্র হিসাবে প্রতিষ্টিত করেছি!

আমরা কেউ কাওরে ছাড় দিতে শিখিনি, আমিই সেরা, আমিই একমাত্র জ্ঞানী এই চিন্তায় আজ আমরা মরিয়া।
সমাজে মেয়েদের কাছ থেকে ছেলেরা কিছু দাবী করে আদায় করা যেমন যৌতুক ও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, টিক তেমনি একজন ছেলেকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে বড় অংকের দেনমোহর ও কাবিননামা আদায় করাও যৌতুকের মধ্যেই পড়ে জনাব সেলেব্রিটি মহোদয়!

তাই বাংলাদেশের সরকারের প্রতি একান্ত আবেদন, যৌতুকের সংজ্ঞার মধ্যে আপনারা দয়া করে মেয়ের কাছ দাবীকৃত বিষয়কে যেমন যৌতুক বলেন, টিক তেমনি করে ছেলের কাছ থেকে মেয়ের পক্ষ অতিরিক্ত দাবী করলে ওটাকেও যৌতুক হিসাবে আপনাদের বিচারিক সংবিধানে অন্তুর্ভুক্ত করুন।

মেয়েদের নির্যাতন করলে যেমন নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা সরকারি খরচে চালিয়ে নেন, ঠিক তেমনি, কোন পুরুষ কোন নারী কর্তৃক শারীরিক বা মানসিক ভাবে নির্যাতিত হলে তার মামলাটাও একই ধারায় চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা গ্রহন করুন সরকার বাহাদুর!
কোন ছেলে যদি মেয়েকে ডিভোর্স দেয়, তবে তাকে পূর্পূর্ণ দেনমোহর আদায় করা লাগে।
তবে, কোন মেয়ে যদি ছেলেকে স্বেচ্ছায় ডিভোর্স দেয় তাহলে তার জন্য সকল প্রকার দেনমোহর মওকুফ করার আইন প্রনয়ন করা হউক!

তবেই সমাজে বিয়ে সহজ ও সরল সঠিক হবে বলে আমার বিশ্বাস। যৌতুকের কারনে কোন মেয়েকে আর কস্ট পেতে হবে না। আর কোন বিবাহের উপযুক্ত ছেলেকেও মেয়েকে যৌতুক দেওয়ার ভয়ে বিবাহ থেকে বিরত থাকা লাগবে না! তবেই বন্ধ হবে দেশের সকল রিয়েল ও ভার্চুয়াল সকল পতিতালয়!

তাই আসুন আমরা সকলেই সকল প্রকার যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।

লেখক: শাহাজাহান
স্বেচ্ছাসেবী ও মানবাধিকার কর্মী
mdshajahan.09@gmail.com

Exit mobile version