বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে একটি অস্বস্তিকর অবস্থানে রয়েছেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন এবং সেখানে কী করবেন, দলের নেতৃত্ব কাকে দেবেন, এসব প্রশ্ন তার সামনে রয়েছে। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন বিক্ষোভের ফলে তিনি এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হন এবং বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।
এদিকে, বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে, শেখ হাসিনা দুবাইতে চলে যেতে পারেন। মানবজমিনের একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারত সরকার তাকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠানোর জন্য সম্মত হয়েছে। তবে, তিনি মাঝে মাঝে দলের নেতাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করছেন এবং ‘অডিও বিপ্লব’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছেন। এই অডিও বার্তার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
শেখ হাসিনার সর্বশেষ অডিও বার্তা থেকে জানা যায়, তিনি দলের দায়িত্ব কাকে দেবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন না যে যাকে দায়িত্ব দেবেন, তিনি নিরাপদে থাকতে পারবেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হাসিনা নিজেকে পরিবারে সীমাবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করছেন। দিল্লিতে তার ছোটবোন রেহানা এবং কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার আলোচনা হচ্ছে, যা নিয়ে অনেক গুজব রয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বেশ কিছু নেতা তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। একজন সাবেক মন্ত্রীকে দল গোছানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, কিন্তু দলের নেতাকর্মীরা দৃঢ়সংকল্পে রয়েছেন যে হাসিনা শীঘ্রই নির্দেশ দেবেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর আওয়ামী লীগ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছিল। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন, কারণ দলটির প্রধান শেখ হাসিনা নিজেই বিদেশে রয়েছেন।
এই অস্থিরতার মধ্যে, শেখ হাসিনাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে তার রাজনৈতিক অক্ষমতা ও দুর্নীতির কারণে। দলের নেতারা বলেন, হাসিনা অতিরিক্ত ভারত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন, যা তার পতনের কারণ। এক নেতা বলছেন, হাসিনা নিজেই তার সমস্যা। তিনি আমলাদের ওপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন যে, দলটি কার্যত সরকারের অংশ হয়ে গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, বর্তমান সরকারের ভিতরে রাজনৈতিক শক্তির অভাব রয়েছে। যদিও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে, তবে পরিস্থিতি এখনও নড়বড়ে। বিএনপি নির্বাচন সংস্কার দাবি করছে, তবে জামায়াত ভিন্ন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে।
শেখ হাসিনার সামনে একটি বড় প্রশ্ন দাঁড়িয়ে আছে: তিনি কবে দেশে ফিরবেন? অসংখ্য হত্যামামলার শিকার হয়ে তিনি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আছেন। শেষ খবর অনুযায়ী, তিনি দুবাই যেতে পারেন। নির্বাচনের বিলম্বিত হওয়া এবং ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোর শক্তিশালী হওয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও জটিল করে তুলছে।
নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি তত বেশি জটিল হতে থাকবে। জামায়াতের নতুন কৌশল এবং এর ফলে ইসলামপন্থীদের সংগঠিত হওয়ার প্রক্রিয়া দেশে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির মঞ্চে কী ঘটে!