গাজার বিধ্বস্ত অবস্থার মধ্যে ইসরায়েলি হামলা
গাজার বিধ্বস্ত অবস্থার মধ্যে ইসরায়েলি হামলা

ইসরায়েলি বিমান বাহিনী অবিরাম হামলা চালাচ্ছে, কামানের গোলা ছোঁড়া হচ্ছে এবং মাটির সঙ্গে ঘরগুলো মিশে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কত মানুষ মারা গেছে, তার সঠিক হিসাব কেউ জানে না। গাজার চিত্র এখন আর একটি শহরের মতো নেই; এটি হয়ে উঠেছে মৃত্যুর নগরী। চারপাশে ভবনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং সেখানে কংক্রিটের স্তুপের মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ হয়তো ভাবতে পারে, তারা হাজার হাজার বছরের পুরনো একটি পরিত্যক্ত শহরের ধ্বংসাবশেষের দিকে তাকিয়ে আছে। তবুও, পুড়ে যাওয়া গাজার মানুষগুলো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।

গত বছর নৃশংস ইসরাইলি হামলায় গাজার ৭৫% অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। এর ফলে ফিলিস্তিনি অঞ্চলের চেহারা অচেনা হয়ে উঠেছে। তবে ইসরায়েল গাজা, পশ্চিম তীর এবং লেবাননে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সোমবার তারা গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে ৭৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। হামাস যুদ্ধের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে, যা ইসরায়েলকে তাদের হামলা জোরদার করতে প্রভাবিত করেছে।

অন্যদিকে, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বন্দর শহর হাইফা ও তেল আবিবের সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় স্বীকার করেছে। কিন্তু ইসরায়েল বলছে, তারা বৈরুতের হিজবুল্লাহর সদর দফতরে হামলা চালিয়েছে। তারা দক্ষিণ লেবানন থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজার ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪১,৯০৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং প্রায় ১০০,০০০ মানুষ আহত হয়েছে। অন্যদিকে, হামাসের হামলায় ১,১৩৯ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে এবং হামাস প্রায় ২৫ জনকে জিম্মি করেছে। তাদের মধ্যে অনেককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তবে কিছু জিম্মি মারা গেছে এবং এখনও শতাধিক জিম্মি রয়েছেন। গাজা যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকীতে নিউইয়র্ক পুলিশের হাতে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার হয়েছে।

সোমবার গভীর রাতে ম্যানহাটনে ফিলিস্তিনিপন্থীরা বিক্ষোভ করেছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে। তারা গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

হামাসের সামরিক শাখার মুখপাত্র আবু ওবেদা যুদ্ধের বার্ষিকীতে এক বিবৃতিতে বলেছেন, জিম্মিদের ভাগ্য এখন ইসরায়েলের হাতে। হামাস দীর্ঘদিন যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। তিনি বলেছেন, “আমরা জিম্মিদের কথা বলছি— আমরা দখলদার ও জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের বলছি, এক বছর আগে আপনারা সব জিম্মিকে ছেড়ে দিতে পারতেন। কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উচ্চাকাঙ্ক্ষা সবসময় জিম্মি এবং তাদের পরিবারের জন্য ক্ষতিকর। প্রথম দিন থেকেই জিম্মিদের নিরাপদ স্থানে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, কারণ আমরা আমাদের ধর্ম এবং মানবতার আইন মেনে চলি। আমরা তাদের বন্দী বিনিময়ের জন্য নিরাপদ স্থানে রেখেছি।”

সোমবার উত্তর গাজা উপত্যকায় একটি ২০ বছর বয়সী ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে, যা ইসরায়েলের পাবলিক ব্রডকাস্টার জানিয়েছে। তাদের তথ্যমতে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৭২৯ ইসরায়েলি সেনা এবং ৬৭ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি মানবাধিকার গোষ্ঠী দাবি করেছে যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা ও পশ্চিম তীরে মোট ১০৮ সাংবাদিককে আটক করেছে। অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রিজনারস সাপোর্ট অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (আদামির) জানিয়েছে, অন্তত ৫৮ জন সাংবাদিক ইসরায়েলের কারাগারে রয়েছেন, তাদের মধ্যে ছয়জন নারী সাংবাদিক। অন্তত ১৬ জন সাংবাদিককে প্রশাসনিকভাবে আটক করা হয়েছে।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন