শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, যা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অনাবিল পরিবর্তনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলস্বরূপ। শিক্ষার্থীদের বিশেষ অনুরোধে তিনি এই গুরুতর দায়িত্ব নিয়েছেন। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন, গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংস্কারের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন, গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হওয়া এবং চলমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রআলাপকালে কথা বলেছেন এই অর্থনীতিবিদ।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : আপনাকে শুভেচ্ছা। দুই মাস হল, আমি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছি। এটা একেবারে নতুন সময় এবং নতুন দায়িত্ব, যা আগে কখনও ভাবিনি। দায়িত্বটা বেশ বড়, এবং আমি এটা সামলানোর চেষ্টা করছি। হঠাৎ করে যে দায়িত্ব এল, সেটা নিয়ে আমি যোগ্যতা অর্জন করতে সচেষ্ট আছি।
প্রশ্ন: দুই দশক ধরে অনেক গালাগাল শুনতে হয়েছে আপনাকে। আদালতের বারান্দায় ঘুরে বেড়াতে হয়েছে, পদ্মার পানিতে আপনাকে চুবানোর কথাও উঠেছিল। আপনার তো জেলে যাওয়ার কথা ছিল, অথচ হঠাৎ করে সবকিছু বদলে গেল। এখন আপনি রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এটা আসলে কীভাবে সম্ভব হলো?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : এটা এক নতুন অভিজ্ঞতা। দুদিন আগে আমি জেলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, যখন হঠাৎ করে বঙ্গভবনে গিয়ে শপথ গ্রহণ করলাম। অতীতে আমাকে সরকার পরিচালনার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল, কিন্তু আমি কখনও সিরিয়াসলি ভাবিনি যে দায়িত্ব নিতে হবে। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল, তাই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।
প্রশ্ন: আপনি কীভাবে এই পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত হলেন? ছাত্রনেতাদের সঙ্গে যোগাযোগটা কীভাবে হলো?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না। পত্রিকা ও টেলিভিশনে তাঁদের সম্পর্কে জানতাম। আমি তখন বিদেশে ছিলাম যখন আন্দোলন ঘনীভূত হচ্ছিল। তখনই এক ছাত্র আমার অফিসে জানায় যে আমার সঙ্গে আলাপ করতে চায়। যখন আমি জানতে পারলাম যে সরকারের দায়িত্ব নিতে হবে, আমি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে আমি এই দায়িত্ব নিতে চাই না। কিন্তু তারা বলল, “আপনিই দায়িত্ব নিতে হবে।” শেষ পর্যন্ত আমি তাদের কথায় সম্মতি দিলাম।
প্রশ্ন: বাইরের কাউকে সঙ্গে নিয়ে পরামর্শ করার সুযোগ হয়েছিল?
ড. ইউনূস : আমার কাছে আর কেউ ছিল না। ছাত্রনেতাদের সঙ্গে পরিচয় হলো, তবে তারা কারা সেটা আমি জানতাম না।
প্রশ্ন: দুই মাস আগে আপনি একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সময়টা কেমন কাটছে?
ড. ইউনূস : সবকিছু দ্রুতগতিতে ঘটেছে। দেশে ফিরে এসে আমি রাতেই শপথ নিয়েছি। এভাবেই আমার যাত্রা শুরু হলো।
প্রশ্ন: আপনি ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। এরপর কখনও বঙ্গভবন বা গণভবনে গিয়েছিলেন?
ড. ইউনূস: আওয়ামী লীগের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। কিন্তু এরপর আমার আর যাওয়ার সুযোগ হয়নি।
প্রশ্ন: জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিয়ে জো বাইডেন, বিল ক্লিনটনের সঙ্গে বৈঠক হলো। এই অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
ড. ইউনূস: সবাই নতুন বাংলাদেশ নিয়ে উৎসাহী। তাঁরা আমাকে পেয়ে আনন্দিত হয়েছেন। আমি স্পষ্টভাবে বলেছি, অতীতের মতো দেখে চললে হবে না, নতুন পরিস্থিতির দিকে নজর দিতে হবে।
প্রশ্ন: সংস্কারের উদ্যোগগুলো কীভাবে দেখতে চান?
ড. ইউনূস: আমাদের দ্রুতগতিতে সংস্কার করতে হবে। আমরা একটা বিধ্বস্ত কাঠামোর ওপর শুরু করেছি।
প্রশ্ন: আপনি আসার আগে যে সমস্যাগুলো জানতেন, এখন ভেতরে গিয়ে কী দেখছেন?
ড. ইউনূস: এখানে একটি ভাঙাচোরা প্রশাসন রয়েছে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের চেয়ে এক ব্যক্তির প্রয়োজনেই সবকিছু চলছে। আমাদেরকে এই অবস্থায় নিয়মশৃঙ্খলা আনতে হবে।
প্রশ্ন: আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আপনার সফলতা কতটুকু?
ড. ইউনূস: এখনও পুরোপুরি সফল হতে পারিনি। চেষ্টা করছি এবং সার্বিকভাবে উন্নতি প্রয়োজন।
প্রশ্ন: আপনি প্রশাসন থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন?
ড. ইউনূস: ওপর থেকে সহযোগিতা রয়েছে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পুলিশের সার্ভিস পুরোপুরি পাচ্ছি না। সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করেছি, তারা সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে।
প্রশ্ন: বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে কী মনে করেন?
ড. ইউনূস: আমাদের কাজের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছি, তবে শুরুতে ধীরে ধীরে চালু করতে হচ্ছে।
প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের সমন্বয়কদের সরকার পরিচালনায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত কেমন?
ড. ইউনূস: তরুণদের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত। তারা নতুন চিন্তা নিয়ে আসবে। কাজেই আমরা যত তাড়াতাড়ি পারি সব দায়িত্ব তাদের হাতে ছেড়ে দিতে চাই।