সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি চৌধুরী) আর নেই। ফুসফুসের সংক্রমণজনিত অসুস্থতার কারণে তাকে ঢাকার উত্তরা বাংলাদেশ মহিলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শনিবার (৫ অক্টোবর) মধ্যরাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার ছেলে, মাহি বি চৌধুরী, এই মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, মৃত্যুর সময় তার পাশে ছিলেন স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং একমাত্র ছেলে মাহি বি চৌধুরী। সাবেক রাষ্ট্রপতিিএর মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বি চৌধুরীকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ২ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার চিকিৎসা পরিচালনা করছিলেন হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট ডা. অপর্ণা রহমান এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মারুফ বিন হাবিব ও ডা. শায়লা চৌধুরী। চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর, এবং তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। এর আগেও তিনি একাধিকবার একই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
বি চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৭৮ সালে, যখন তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং দলটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জিয়াউর রহমান সরকারের অধীনে তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। তবে ২০০২ সালের ২১ জুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। এরপর ২০০৪ সালের ৮ মে তিনি বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দলটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
বি চৌধুরীর বর্ণাঢ্য জীবনের সূচনা হয় ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লার মুন্সেফবাড়ির নানাবাড়িতে। তার পিতা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি এবং যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বি চৌধুরীর শিক্ষাজীবনও ছিল সমৃদ্ধ। তিনি সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডন, এডিনবার্গ এবং গ্লাসগো থেকে এফআরসিপি লাভ করেন।
১৯৭৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আহ্বানে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং ১৯৭৯ সালে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি শিক্ষামন্ত্রী, সংসদের উপনেতা এবং বিরোধী দলীয় উপনেতাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বি চৌধুরী ছিলেন হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরীর স্বামী। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বড় মেয়ে মুনা চৌধুরী একজন আইনজীবী, ছোট মেয়ে শায়লা চৌধুরী চিকিৎসক এবং উত্তরা মহিলা মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপনা করেন। একমাত্র ছেলে মাহি বি. চৌধুরী একজন রাজনীতিবিদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য।