Site icon দৈনিক পূর্বদেশ | বাংলা নিউজ পেপার

জমি দখল : হবিগঞ্জের সর্বত্র আওয়ামী গডফাদার জাহিরের ‘থাবা’

জমি দখল : হবিগঞ্জের সর্বত্র আওয়ামী গডফাদার জাহিরের ‘থাবা’

জমি দখল : হবিগঞ্জের সর্বত্র আওয়ামী গডফাদার জাহিরের ‘থাবা’

জমিসংক্রান্ত বিরোধের মীমাংসার নাম করে জমি দখল, কমিশনের দাবিতে জমি নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ, এবং সরকারি প্রকল্প থেকে লাভ অর্জন—এসব অপকর্মের মাধ্যমে এক রাজনীতিবিদের ক্ষমতার দাপট কাহিনী তুলে ধরে। হবিগঞ্জের প্রভাবশালী সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবু জাহিরের বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলি বহুদিন ধরে শোনা যাচ্ছে।

জমি দখল ও সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি

সরকারি প্রকল্প, জমি অধিগ্রহণ, এবং বালুমহালের ইজারা থেকে শুরু করে জলাশয় ও উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারি পর্যন্ত সবকিছুতেই আবু জাহিরের হস্তক্ষেপ ছিল উল্লেখযোগ্য। ১৬ বছরে তাঁর সম্পদ বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ। তাঁর ক্ষমতার এই অগ্রগতি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শুরু হয়।

কমিশন দিয়ে জমি নিবন্ধন

হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় জমি নিবন্ধনে কমিশন দেওয়া আবশ্যক ছিল বলে অভিযোগ আছে। বিশেষ করে ওলিপুর এলাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো জমি কিনতে গেলেও আবু জাহিরের ছাড়পত্র ছাড়া নিবন্ধন করতে পারত না। অভিযোগ অনুযায়ী, জমির দামের ১০ শতাংশ কমিশন দেওয়ার পরেই নিবন্ধন করা যেত।

ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ

সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতেও ঠিকাদারদের প্রতিযোগিতায় সুবিধা দেওয়া হতো না। বরং প্রকল্পগুলির কাজ আবু জাহির নিজেই তাঁর পছন্দের লোকজন দিয়ে করাতেন। হবিগঞ্জে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বড় বড় প্রকল্পে তাঁর প্রভাব প্রতিটি পদক্ষেপে ছিল দৃশ্যমান।

জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি

জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াতেও জাহিরের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি প্রকল্পগুলির জন্য জমি অধিগ্রহণের সময় তিনি মালিকদের কাছ থেকে জমি কিনে পরে সেই জমি সরকারের নির্ধারিত দামে বিক্রি করতেন। এর মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকা লাভ করেছেন।

বালুমহাল ও জলাশয় নিয়ন্ত্রণ

বালুমহাল এবং জলাশয় ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে আবু জাহিরের প্রভাব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হবিগঞ্জের খোয়াই নদী থেকে বালু উত্তোলন ও বিভিন্ন জলাশয়ের ইজারাদারদের নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতেই ছিল।

পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা

আবু জাহির নিজের পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনদের বিভিন্ন রাজনৈতিক পদে বসিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও অন্যান্য আত্মীয়রা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছেন। এর ফলে, স্থানীয় রাজনীতি এবং প্রশাসনের উপর তাঁর পরিবারের একচ্ছত্র প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ভিন্নমত দমন ও মামলা

ভিন্নমত পোষণকারীদের দমন করতে বহুবার মামলা করা হয়েছে। আবু জাহিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি ভিন্নমতাবলম্বীদের হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা করেছেন, যার ফলে অনেক সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ জেল খেটেছেন।

সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি

২০১৫ সালে আবু জাহিরের ৩১ ভরি সোনা ছিল, যা ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে ২৩৯ ভরিতে। তাঁর পরিবারের মোট আয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

Exit mobile version