তিস্তা নদী এর পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ৫১.৮৩ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিস্তা নদী এর পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে, তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে নদ-নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই দিন ধরে লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনলেও, খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষের জন্য চরম বিপদ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, কাজের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু রংপুর জেলায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই ভারি বর্ষণের ফলে নদ-নদীগুলোর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি একই সাথে বাড়ছে।
চর গড্ডিমারী এলাকার বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, “পানির বৃদ্ধিতে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি। কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।” তিনি উল্লেখ করেন যে, বৃষ্টিপাতের কারণে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
পাউবো ডালিয়া শাখার উপপ্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন জানান, “বর্তমানে তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। আমরা তিস্তা নদী এর ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছি যাতে পানি দ্রুত প্রবাহিত হতে পারে।”
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউল হক জিয়া বলেন, “দুই দিন ধরে টানা বর্ষণের ফলে তিস্তার পানি বাড়ছে। বেশ কিছু এলাকার রাস্তাঘাটে পানি উঠে যাওয়ায় মানুষ চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছে।”
এই পরিস্থিতিতে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হাক্কানি মন্তব্য করেন, “প্রতি বছর অসময়ের বন্যা ও নদী ভাঙনের কারণে এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য নদী খনন, সংরক্ষণ এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই।”
স্থানীয় জনগণের উদ্বেগ এবং পানি বৃদ্ধির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এলাকার মানুষের জন্য নিরাপত্তা এবং ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার উপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে, যাতে তারা এই বিপদের সময়ে সুরক্ষিত থাকতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে পানি বৃদ্ধির পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চলছে।