ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান: বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের নতুন দিগন্ত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান: বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কারের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র, সুশাসন, এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই সমাজ গঠনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘে প্রদত্ত এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের অভ্যুত্থান, মুক্তি ও গণতান্ত্রিক যাত্রায় নতুন করে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে ড. ইউনূসের ভাষণ

গত শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, ছাত্র ও জনতার অভ্যুত্থান দেশের বর্তমান শাসনব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। এ পরিবর্তন বৈষম্য, নিপীড়ন, এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণের দৃঢ় অবস্থানকে চিহ্নিত করে। ড. ইউনূস বলেন, ছাত্র ও যুবসমাজের অদম্য সংকল্প রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল রূপান্তরের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে, যা সারা বিশ্বের জন্য এক উদাহরণ হয়ে থাকবে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে গণআন্দোলনে রূপান্তর

ড. ইউনূস তার ভাষণে উল্লেখ করেন, এ অভ্যুত্থান এর শুরুতে ছাত্র-যুবসমাজ মূলত বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল, যা পরবর্তীতে গণআন্দোলনের রূপ নেয়। জনগণের সমবেত কণ্ঠে একনায়কতন্ত্র, অবিচার, এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এ আন্দোলন দেশে গণতন্ত্রের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তিনি বলেন, জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার এ আন্দোলন তরুণ প্রজন্মকে সামনে রেখে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়বিচার ও সুশাসনভিত্তিক রাষ্ট্রে রূপান্তরের লক্ষ্যে নিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে নতুনভাবে উপস্থাপন

ড. ইউনূস তাঁর ভাষণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যাত্রা দীর্ঘমেয়াদি সুশাসন এবং স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন ব্যবস্থার মাধ্যমে টেকসই করতে হবে। এজন্য তিনি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে একটি ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করার আহ্বান জানান। – অভ্যুত্থান

তিন শূন্য ধারণা: শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, শূন্য কার্বন নিঃসরণ

বিশ্বের পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ড. ইউনূস “তিন শূন্য” ধারণার প্রস্তাব করেন—শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণ। তিনি উল্লেখ করেন, তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে এবং সমাজে নতুন সৃজনশীল শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে এই ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রোহিঙ্গা সংকট ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

ড. ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গেও কথা বলেন এবং তাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ শান্তি রক্ষায় তার ভূমিকা অব্যাহত রাখবে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।

ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের অভিপ্রায়

বাংলাদেশকে একটি ন্যায়বিচার এবং সমৃদ্ধির ভিত্তিতে পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, গণতন্ত্রের উত্তরণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। অবাধ, সুষ্ঠু, এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারই অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য।

ড. ইউনূসের ভাষণ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের যাত্রা এবং সুশাসনের পথে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছে।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন