দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার শীর্ষ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সার্ক পুনরুজ্জীবিত করতে পাকিস্তানের সমর্থন চেয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সংস্থাটির সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, সার্ক (দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা, পারস্পরিক সম্পর্ক এবং উন্নয়নের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। তিনি জানান, সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং সম্পর্ক আরও গভীর হবে। তিনি বলেন, “সার্কের পুনরুজ্জীবন অঞ্চলের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূস মতে, পাকিস্তানের সহায়তা এই প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করতে পারি, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের মধ্যে একতা এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।” তিনি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে এই ব্যাপারে আরও বিস্তারিত আলোচনা করতে উৎসাহিত করেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফও ড. ইউনূসের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, “বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন পৃষ্ঠা খোলার প্রয়োজন।”
শেহবাজ শরিফ বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও চামড়া খাতে বিনিয়োগে পাকিস্তানের আগ্রহের কথাও তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেলে উভয় দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ধরনের বিনিয়োগ উভয় দেশের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুই দেশের মধ্যে যুব কর্মসূচির বিনিময়ের প্রস্তাবও করেন। তিনি বলেন, যুবকদের মধ্যে সহযোগিতা ও যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে উভয় দেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব। যুবকদের সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী শক্তি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সক্ষম এবং তারা ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে পারে।
বৈঠকের সময় বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনা নবায়ন এবং যৌথ কমিশন পুনরায় সক্রিয় করার বিষয়ে আলোচনা হয়। এই আলোচনা উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. তৌহিদ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। তিনি এই সহযোগিতার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। সার্কের পুনরুজ্জীবন এবং বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এভাবে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো একসাথে কাজ করতে পারলে তারা একটি সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল অঞ্চলের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। সার্কের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সহযোগিতা এবং সম্পর্ক উন্নয়ন, যা এই উদ্যোগের মাধ্যমে আরও উজ্জ্বল হতে পারে।