লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তা নদীর চরে এক যুবতীর লাশ হাত বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের হাতে মেহেদি দিয়ে লেখা ছিল “আই লাভ ইউ,” এবং দুই হাত পেছনে ওড়না দিয়ে বাঁধা ছিল। নিহত যুবতীর মুখ অ্যাসিড বা দাহ্য পদার্থ দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয়েছে, যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে তার পরিচয় গোপন করার উদ্দেশ্যে এমন নৃশংস কাজ করা হয়েছে।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদিতমারীর মহিষখোচা ইউনিয়নের চৌরাহা এলাকার তিস্তা নদী থেকে স্থানীয়রা এই মরদেহটি দেখতে পান। স্থানীয়দের মতে, লাশটি উজান থেকে ভেসে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা মাঠে কাজ করতে গিয়ে প্রথমে এই অজ্ঞাত যুবতীর লাশ দেখতে পান এবং তারা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, হত্যাকাণ্ডটি কিছুদিন আগে ঘটে থাকতে পারে এবং কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লাশটি নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ-উন-নবী জানিয়েছেন, নিহত যুবতীর পরিচয় শনাক্ত করার জন্য পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় তথ্য প্রেরণ করেছে। এ ছাড়া তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার আসল কারণ উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। তিনি আরও জানান, অজ্ঞাত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে, দ্রুতই অপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
এ ধরনের নির্মম হত্যাকাণ্ড স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকে এই হত্যাকাণ্ডকে পূর্ব পরিকল্পিত বলে মনে করছেন এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। যুবতীর শরীরে অস্বাভাবিক ক্ষতচিহ্ন এবং হাতে লেখা “আই লাভ ইউ” বিষয়টি রহস্যজনক এবং এটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো প্রেমঘটিত বিষয় জড়িত কিনা, তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা চলছে।
দেশজুড়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন অপরাধমূলক কার্যকলাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে পুলিশের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারী নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। এই ঘটনার ক্ষেত্রে অপরাধীরা যদি মুখ ঝলসে দিয়ে পরিচয় গোপন করতে চেয়ে থাকে, তাহলে তাদের মধ্যে কৌশলী আচরণ রয়েছে, যা তদন্তকারীদের জন্য আরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
পুলিশ তদন্তের পাশাপাশি জনগণকেও অনুরোধ করছে, এই ধরনের সন্দেহজনক ঘটনায় তৎক্ষণাৎ তথ্য প্রদান করতে। এলাকাবাসীদের সহযোগিতার মাধ্যমে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা যাবে বলে পুলিশের ধারণা।
এই নির্মম ঘটনার দ্রুত সমাধান এবং যুবতীর পরিচয় উদঘাটন হলে, এর সাথে জড়িত অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় জনগণ।