বর্তমানে তৃণমূল আওয়ামী লীগ এর নেতাকর্মীরা শীর্ষ নেতৃত্বের উসকানির ফাঁদে পড়ে সংঘর্ষমূলক ও বেপরোয়া আচরণে লিপ্ত হচ্ছে। প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো স্থানে এই দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হামলা ও সংঘর্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছে। শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বারবার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে যে, বর্তমান সরকার বেশিদিন টিকবে না এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে অস্থিতিশীলতা চলছে। এই আশ্বাস ও নির্দেশনার মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইস্যুভিত্তিক প্রচারণা বাড়ানো হচ্ছে।
বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তৃণমূল পর্যায়ে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগের একটি কৌশল আছে। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য মতে, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এমন কৌশল নিয়েছে যাতে তৃণমূলের মনোবল চাঙা থাকে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বিপক্ষে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ানো যায়। সম্প্রতি ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের ফলে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়েছে। তিনি প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে গিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব আত্মগোপনে চলে গেছে। এই সময় দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থেকে সরাসরি কোনো বক্তব্য না এলেও শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি অডিও বার্তা প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশের রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি একটি অডিও বার্তায় শেখ হাসিনা একজন ছাত্রলীগ নেতাকে বলেন, “সুদখোর ইউনূসের কথা শুনে জামাতে লাফাচ্ছে। ওদের সামনে আর বেশি দিন নেই। তালিকা তৈরি করো, গুনে গুনে হিসাব নেওয়া হবে।” তার এই বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, তিনি তার দলের প্রতি আস্থাশীল এবং আবার ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। শীর্ষ নেতৃত্বের এই ধরনের বার্তা দলের অভ্যন্তরীণ নেতাকর্মীদের মনোবল পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখছে।
শেখ হাসিনার এসব বার্তার প্রভাব তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের বিশ্বাস, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসবে এবং এর ফলে দলীয় কর্মীরা আবার সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক সংঘাতে জড়াতে প্রস্তুত হচ্ছে। তৃণমূল নেতারা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে পোস্ট দিয়ে নিজেদের মনোভাব প্রকাশ করছেন এবং শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনার প্রতি সম্মান জানাচ্ছেন।
তবে, এই ধরনের সংঘাত ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিপদেও ফেলছে। অনেকেই হামলা, মামলা এবং গ্রেফতারের সম্মুখীন হচ্ছেন। শীর্ষ নেতাদের এই ধরনের বার্তা সরাসরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, “শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের শাসন দেশের জনগণ সহজে ভুলবে না। তার দেওয়া অডিও বার্তাগুলো একটি পরিকল্পিত কৌশল যা নির্বাচনের আগে দলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখার চেষ্টা।”
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের এই কৌশল দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও তৃণমূল পর্যায়ে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে, যা পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।