সম্প্রতি দিল্লির একটি সুপারশপে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলামের দেখা মিলেছে। প্রবাসী বাংলাদেশি অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ছবি ও তথ্য শেয়ার করেছেন। জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে মনিরুল ইসলাম ভারতের রাজধানী দিল্লিতে পালিয়ে গেছেন। এর আগে কলকাতার ইকোপার্কে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
সায়েরের ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “পলাতক আইজিপি মনিরুল ইসলামের অবস্থান নিশ্চিত করেছে অত্যন্ত বিশ্বস্ত সূত্র।” পোস্টের সাথে তিনি মনিরুল ইসলামের একটি ছবি যুক্ত করেছেন, যেখানে তিনি দিল্লির কনট প্লেসের একটি গ্রোসারি স্টোরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনছেন।
এছাড়া, এই এলাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পলাতক বাংলাদেশি রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের উপস্থিতি রয়েছে। সায়ের ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, অনতিবিলম্বে এই ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা উচিত। তবে, সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমের সাথে সাক্ষাৎকারে মনিরুল ইসলাম দাবি করেছেন, তিনি পালিয়ে যাননি এবং দেশেই আছেন। তিনি বলেন, “আমি পালিয়ে যাব না; আমি দেশের জন্য কাজ করছি।”
আইজিপি মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর বিভিন্ন থানায় ১২টির বেশি হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের হয়েছে। গত ১৩ আগস্ট, সরকার তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য ৩ আগস্ট সরকার থেকে ২৫ কোটি টাকা নিয়ে তিনি তা নিজের অফিসে রেখেছিলেন। কিন্তু ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সরকার পতন ঘটে এবং সেই টাকা বিতরণের আগেই তিনি অফিসে যেতে বন্ধ করেন।
এ বিষয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মনিরুল ইসলামের অফিসে ২৫ কোটি টাকার থাকার তথ্য জানতেন তারা। পরে সেই টাকা নিজেরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। বিষয়টি তদন্তে একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রোটেকশন ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) ডিআইজি গোলাম কিবরিয়া।
এদিকে, মঙ্গলবার বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ক্যামেরায় কলকাতার ইকোপার্কে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে আসাদুজ্জামান খান কামাল ছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল, অপু উকিল ও হাজী সেলিমের এক ছেলে উপস্থিত ছিলেন।
কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানান, “আমাদের কাছে এ রকম কোনো তথ্য নেই। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈধভাবে গেছেন নাকি অবৈধভাবে, সে সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।” তিনি আরও বলেন, “এখানে র্যাবের কোনো ধরনের উদাসীনতা বা গাফিলতির বিষয় নেই। আমাদের যে দায়িত্ব ও কর্মপরিধি আছে, সে অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছি।”