সাভারের আশুলিয়ায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে প্রায় ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা শ্রমিকদের অবরোধে মহাসড়কটি স্থবির হয়ে পড়েছে। বকেয়া বেতনসহ বিভিন্ন পাওনা পরিশোধের দাবিতে শ্রমিকরা সোমবার সকাল থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন, যা মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এর ফলে মহাসড়কটিতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জন্যও দুর্ভোগ ডেকে এনেছে। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় শ্রমিকদের মহাসড়কে অবস্থান নিতে দেখা যায়। ফলে নবীনগর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এবং ঢাকামুখী লেনে কবিরপুর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দেয়। শ্রমিকরা সোমবার সকাল ৮টা থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন, এবং সোমবার রাতেও বৃষ্টির মধ্যে ভিজে তারা তাদের অবস্থান অব্যাহত রাখেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কে কর্মব্যস্ততা বাড়তে থাকলেও শ্রমিকদের অবরোধের কারণে যানবাহন চলাচলে বিশাল বাধার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় পথচারী এবং যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। অবরোধের কারণে শুধু নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কেই নয়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও যানজটের সৃষ্টি হয়। নবীনগর থেকে সাভার পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দেয়, যা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
বিক্ষোভের মূল কারণ হলো বার্ডস গ্রুপের চারটি কারখানা – বার্ডস আর এন আর ফ্যাশন্স লিমিটেড, বার্ডস গার্মেন্টস, বার্ডস ফেডরেক্স, এবং বার্ডস এ অ্যান্ড জেড লিমিটেড – কোনো নোটিশ ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া। এই কারখানাগুলোর প্রায় ২,০০০ শ্রমিক বকেয়া বেতন এবং অন্যান্য পাওনার দাবিতে এই বিক্ষোভে অংশ নেন। শ্রমিকরা দাবি করেন, তাদের পাওনাদি ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধের কথা ছিল, কিন্তু মালিকপক্ষ তাদের না জানিয়ে নোটিশ টানিয়ে দেয় যে পাওনা তিন মাস পর পরিশোধ করা হবে।
নবীনগর-চন্দ্রা বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শ্রমিক বাবু বলেন, “আমাদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা ৩০ সেপ্টেম্বর দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তারা নোটিশ দিয়ে বলছে তিন মাস পর পরিশোধ করা হবে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই কীভাবে তারা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে?” তিনি আরও বলেন, “যাদের চাকরির বয়স এক বছরের কম, তাদের কি কোনো ক্ষতি হয়নি?”
বার্ডস গ্রুপের কারখানাগুলো বাইপাইল বুড়ির বাজার এলাকায় অবস্থিত এবং এসব কারখানা ২৮ আগস্ট থেকে লে-অফ ঘোষণা করা হয়। শ্রমিকরা লে-অফ মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানালে, কারখানাগুলোকে ১২৪ (ক) ধারায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী জানান, সোমবার থেকেই বাইপাইল এলাকায় একই ধরনের অবস্থা বিরাজ করছে। সড়কে যান চলাচল বন্ধ, এবং কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও নেই। তিনি বলেন, “আমরা যদি অ্যাকশনে যাই, তাহলে আরও সমস্যা হতে পারে। আমরা আসলে কী করতে পারি?”
এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের পাওনা দ্রুত পরিশোধ করে সমস্যা সমাধানের দাবি উঠেছে, যাতে জনদুর্ভোগ কমে আসে এবং মহাসড়ক পুনরায় সচল হয়।