কেয়ারটেকার থেকে হাসিনার আত্মীয়
কেয়ারটেকার থেকে হাসিনার আত্মীয়

বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়ি কেয়ারটেকার সাবেক এমপি এবং জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সোমবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ওবায়দুর রহমান এ গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে, কোন মামলার ভিত্তিতে গিনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।গিনির বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে গাইবান্ধা এবং ঢাকায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধার বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়ার অভিযোগে গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের সাবেক এমপি গিনি ও সদ্য সাবেক এমপি শাহ সারোয়ার কবীরসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মাহবুব আরা বেগম গিনি এর রাজনৈতিক উত্থানের ইতিহাস বেশ চমকপ্রদ। তিনি ও তার ভাই টুটুল ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়ির কেয়ারটেকার। এই দায়িত্বের সুবাদে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন গিনি। ধীরে ধীরে তিনি শেখ হাসিনার আত্মীয় হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন এবং তার আস্থাভাজন হন। গিনির দায়িত্ব ছিল শেখ হাসিনার বাসার পারিবারিক কাজকর্মে সহযোগিতা করা। শোনা যায়, এমনকি তিনি হাসিনার পা টিপেও দিতেন। এর বদলে তিনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করেন।

শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ার পর গিনি নানা উন্নয়ন প্রকল্পে অংশ নেন এবং আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন। বলা হয়, তিনি নির্বাচনকালে বিপুল পরিমাণ অর্থ ছড়িয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এরপর, উন্নয়নের নামে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্থ আয়ের কৌশল তৈরি করেন।

গিনি (কেয়ারটেকার) ঢাকায় বেশিরভাগ সময় থাকতেন, আর গাইবান্ধায় তার হয়ে কাজ করতেন তার ভাতিজা আহসান হাবীব রাজিব এবং মৃদুল মোস্তাফি ঝন্টু। রাজিব ছিলেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, যিনি গিনির হয়ে বিভিন্ন অফিসের কাজ ভাগাভাগি করতেন। ঝন্টু গিনির সঙ্গে সবসময় থাকতেন এবং তার ব্যক্তিগত ফরমায়েশ খাটতেন। গাইবান্ধাবাসীর অভিযোগ, গিনি এবং তার সহযোগীদের কারণে গাইবান্ধায় রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আর্থিক অনিয়মের মাত্রা বেড়েছে।

গিনির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগও বেশ গুরুতর। স্থানীয়রা বলছেন, তিনি শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। গাইবান্ধার জনগণ এখন জানতে চায়, গিনি কোথায় আছেন এবং তার অবৈধ টাকার হিসাব কোথায়?

মাহবুব আরা বেগম গিনি গ্রেফতার হওয়ার পর গাইবান্ধা এবং সারাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা এবং প্রশ্ন উঠেছে, তার বিরুদ্ধে নেওয়া এই পদক্ষেপের পেছনে মূল কারণ কী এবং এর পরবর্তী ফলাফল কী হতে পারে।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন