কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগর এ ফের একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম (জিএফএস) নামক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানান। রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দেওয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, অক্টোবর মাসের ১৫ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। জিএফএস মডেলের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ সময়ের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি গঠন হতে পারে এবং এটি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ (অক্টোবর ২২ থেকে ২৫) এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ (অক্টোবর ২১ থেকে ২৫) সৃষ্টি হয়েছিল। এই দুটি ঘূর্ণিঝড়ই বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল উপকূলে আঘাত হেনেছিল। পলাশের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২৪ সালেও একই সময়ে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
তবে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি আসলেই সৃষ্টি হবে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আগামী অক্টোবর মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তখন আরও সঠিক পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। তবে বর্তমান পূর্বাভাস অনুযায়ী, এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি আশঙ্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্যতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং ভারতসহ ১৩টি দেশের উপকূলে এসব ঘূর্ণিঝড় প্রভাব ফেলে। সিত্রাং ও হামুন ঘূর্ণিঝড়ের মতো বড় ধরনের ঝড়গুলো সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। তাই এসব অঞ্চলে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা থাকলে সতর্কতা জারি করা জরুরি হয়ে পড়ে।
২০২৪ সালের ২৬ মে বঙ্গোপসাগর এ সৃষ্ট সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। এটি মৌসুমের প্রথম ঘূর্ণিঝড় ছিল, যা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় তাণ্ডব চালায় এবং পরের দিন স্থলভাগ অতিক্রম করে দুর্বল হয়ে পড়ে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, এমন ঝড়গুলো উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা, ভূমিধস এবং প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে।
যদিও ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস সম্পর্কে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে পূর্বাভাস মডেল অনুযায়ী অক্টোবর মাসে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষকে ঘূর্ণিঝড়ের আগে এবং পরে কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং করণীয় কী হবে তা জানিয়ে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।